বরগুনা : বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে রিফাত শরীফ (২৩) নামে এক যুবককে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড মঙ্গলবার (২ জুলাই) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
এই ঘটনায় এতদিন নয়ন বন্ডকে কিলিং মিশনের নায়ক মনে করা হলেও শনিবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে নতুন একটি ভিডিও প্রকাশের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
দেশব্যাপী আলোচিত বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ডের আরো একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইয়াল হয়েছে। আর তাতে উঠে এসেছে এমন কিছু দৃশ্য যা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে এই ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে।
স্ত্রীর সামনে কলেজ ছাত্র রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও’র পরে এবার আরো একটি নতুন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যে ভিডিওতে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা কিলিং মিশনের বিষয়টি উঠে আসে।
যা দেখা যায় এই ভিডিও ক্লিপে : সকাল ১০টা বেজে ৬ মিনিট, এ সময় থেকেই দুই একজন করে বরগুনা সরকারী কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকে ০০৭ গ্রুপের সদস্যরা। এর কিছু সময় পরেই কলেজের মূল গেটের ভেতর থেকে কয়েকজন মারতে মারতে বাইরে নিয়ে আসে রিফাতকে। ভিডিওতে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নয়ন বন্ড হলেও কিলিং মিশনে মূল ভূমিকা পালন করে দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী। ঘটনার পূর্ব থেকে তার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী হামলা চালানো হয় রিফাত শরীফের ওপর। আর এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় ০০৭ গ্রুপের অন্তত ১৮/২০ জন।
শুধু তাই নয়, ঘটনার শুরুতে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিরর ভুমিকা নিয়েও রহস্য ফুটে ওঠে ওই ভিডিও ক্লিপ দেখার পর। যেখানে রিফাতকে কলেজের সামনে থেকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাবার সময় মিন্নির ভূমিকা একজন সাধারণ মানুষের মতই দেখা যায়। তিনি হত্যাকারীদের পেছনে সাঁড়িতে ধীর পায়ে হাটছিলেন।
নতুন করে ভাইরাল হওয়া সিসি ক্যামেরার ওই ফুটেজে দেখা যায়, রিফাত শরীফ ঘটনার দিন সকাল ১০টায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিতে সাদা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে আসে।
সকাল ১০টা ৩ মিনিটে কিলিং মিশনের মূল ভুমিকা পালন করা বন্ড বাহিনীর অন্যতম প্রধান রিফাত ফরাজী ৬/৭ জনকে নিয়ে কলেজ গেটের বাইরে অপেক্ষা করছে। তাদেরকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং পরিকল্পনা করছে রিফাত ফরাজী। এর দুই থেকে তিন মিনিট পরে আরো ২/৩ জনকে কলেজে পাঠানো হয়।
এর পর ১০টা ৯ মিনিটে ওই তিনজন সহ আরো কয়েকজন কলেজ গেটের উল্টো পাশে অবস্থান নেয়। এর এক মিনিট পরেই গেটের কাছে এসে অপর দুই যুবককে কিছু নির্দেশনা দিয়ে উল্টো দিকে পাঠিয়ে দেয় ঘাতক রিফাত ফরাজী।
১০টা ১২ মিনিটে কলেজ থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করে রিফাত শরীফ। ঠিক তার এক মিনিটের মাথায় অর্থাৎ ১০টা ১৩ মিনিটে কলেজ গেটে এসে রিফাত শরীফকে বন্ড বাহিনীর সহায়তায় জোর করে ধরে নিয়ে যায় ঘাতক রিফাত ফরাজী।
ভিডিওতে দেখা যায়, রিফাত শরীফকে ধরে নেয়ার সময় বন্ড বাহিনীর সাথে একেবারে পেছনের সাঁড়িতে স্বাভাবিকভাবে হাটছিলেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। এ সময় কথিত এই সাহসি স্ত্রীর মাঝে স্বামীকে রক্ষা করাতো দূর, সামান্য বাধা সৃষ্টির চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি।
এরপর কিছুটা সামনে যেতেই বন্ড বাহিনী রিফাত শরীফকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে শুরু করে। এর মধ্যে থেকে রিফাত ফরাজী ও অপর একজন দৌড়ে গিয়ে তিনটি রামদা নিয়ে আসে। রিফাত ফরাজীর হাতে থাকা দুটি রামদার একটি সে নয়ন বন্ডকে দেয়। আর একটি দিয়ে নিজেই রিফাত শরীফকে কোপাতে শুরু করে। যার এক পর্যায়ে ঘটজনার প্রথম প্রকাশিত ভিডিওর নায়িকা হয়ে ওঠা মিন্নিকে দেখা যায় দৃশ্যে আসতে। ততক্ষণে খুনিদের উপর্যোপুরি রামদার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রিফাত শরীফ।
এরপর রিফাত শরীফকে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে গুরুতর অবস্থায় ফেলে রেখে ঘাতক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীসহ বন্ড বাহিনী কলেজ গেটের সামনে থেকে দা উঁচিয়ে বীরদর্পে চলে যায়। তার ৮ মিনিট পর মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌছে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে দু’জন পুলিশ সদস্য।
এদিকে প্রথম ভিডিওতে রিফাতকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও সিসি ক্যামেরায় ধারনকৃত দ্বিতীয় ভিডিও ফুটেজে উঠে আসে হত্যার পরিকল্পনার পূর্ণ মঞ্চায়ণ। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ভাইরাল হয়ে যায়। নতুন করে প্রশ্ন ওঠে শুরু থেকে রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি’র ভুমিকা নিয়ে।
অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত রয়েছেন এবং যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফ নামের এক তরুণকে। এ সময় বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা তার স্বামীকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাকে (রিফাত) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। বেলা তিনটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন-
https://youtu.be/-zJNPRXQ0D8